ওরা (সাংবাদিকরা) ভিতরে আসলো কিভাবে ? অস্ত্র রেডি রাখনি? সরকার তোমাকে গান (অস্ত্র) কি কারনে দিয়েছে? আনসার সদস্যকে ডাসারের ইউএনও
মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় বন্ধের দিনে ৩টি কলেজের শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষা নিল ইউএনও, প্রথম দিনেই সৃষ্টি হয়েছে নানা বিতর্ক। ইংরেজী প্রথম পত্র পরীক্ষার দিনে প্রশ্ন দেয়া হয় দ্বিতীয় পত্রের। পরে তা সংশোধন করে প্রথম পত্রের প্রশ্ন দেয়া হয়। তার জন্য বিলম্ব হয় পরীক্ষা নিতে। এছাড়া পরীক্ষা পরিচালনার জন্য কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। ইউএনও নিজেই সবকিছু নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে বহিরাগতদের অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে যান ইউএনও সারমীন ইয়াছমিন। সাংবাদিকরা বক্তব্য নিতে ভিতরে আসলো কিভাবে ? অস্ত্র রেডি রাখনি? সরকার তোমাকে গান কি কারনে দিয়েছে ? তার অফিস কক্ষে সাংবাদিকরা বক্তব্য নিতে গেলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে তার দেহরক্ষির দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য পরিমলকে এসব কথা বলেন।
জানা যায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার সরকারী শেখ হাসিনা একাডেমী এন্ড উইমেন কলেজ, ডাসার ডিকে আইডিয়াল আতাহার আলী একাডেমি এন্ড কলেজ ও শশীকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যায়ের এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইউএনও সারমীন ইয়াছমিন। কিছুদিন আগে (রমজানের মধ্যে) তার সিদ্ধান্তকে জানিয়ে দেন ওই কলেজের প্রধানদের। তাদের বলা হয় প্রতি কলেজ থেকে দুই জন করে শিক্ষক চাওয়া হয় পরীক্ষা পরিচালনা করার জন্য। তবে পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন ইউএনও। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেল পরীক্ষার রুটিন তৈরী করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি বাবদ কোন টাকা ধার্য করা হয়নি। পরীক্ষার ব্যয়ভার উপজেলা প্রশাসন বহক করবে বলেও জানানো হয়। তবে তিনটি কলেজের প্রধানকে এ খরচ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দেন ইউএনও। রুটিন অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ০৯ টায় পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য ৩ টি কলেজের শিক্ষার্থীরা । পরীক্ষার হলে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পায় তাদের হাতে দেয়া হয় ইংরেজী ২য় পত্রের প্রশ্ন। প্রশ্ন পেয়ে হৈচৈ শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মাঝে। পরে তাদের বলা হয় একটু অপেক্ষা করতে । পরে ১৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে নতুন প্রশ্ন দিতে বিলম্ব হয়। তবে এ সময় নতুন করে প্রথম পত্র প্রশ্ন ছাপাতে বহিরাগতদের ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটার পরে ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারী শেখ হাসিনা একাডেমী এন্ড উইমেন কলেজের পরীক্ষার জন্য নিধার্রিত ২ শিক্ষককে হল থেকে বের করে দেন ইউএনও। জেলার কোথাও এমন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না বলেও জানা যায়। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র কাছে গেলে তিনি ক্ষেপে যান এবং আনসার সদস্য পরিমলকে সাংবাদিকদের ভিতরে ঢুকতে দেয়ার কারনে গালিগালাজ করেন। এ সময় তিনি আনসার সদস্য পরিমলকে বলেন, সাংবাদিকরা (ওরা) ভিতরে আসলো কিভাবে? অস্ত্র রেডি রাখনি? সরকার তোমাকে গান কি কারনে দিয়েছে ? তার অফিস কক্ষে সাংবাদিকরা বক্তব্য নিতে গেলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে তার দেহরক্ষির দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য পরিমলকে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন , তিনি অনেক ব্যস্ত আছেন। এ বিষয়ে কোন মতামত দেননি তিনি। তবে পরীক্ষার বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না বলে জানান, তিন কলেজের অধ্যক্ষ।
শিক্ষার্থীরা জানায় , তাদের ঈদের পরে পরীক্ষার বিষয়ে জানানো হয়। টেস্ট পরীক্ষার পরে এ মডেল টেস্ট হলে ভালো হতো। কলেজের সিদ্ধান্ত মেনে তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো। তবে প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষার সময় ২য় পত্রের প্রশ্ন প্রথমে দেয়া হয় তাতে তারা বিব্রত হয়। পরে নতুন প্রশ্ন ছাপিয়ে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়।
এ বিষয়ে ডাসার ডিকে আইডিয়াল আতাহার আলী একাডেমি এন্ড কলেজের উদয়ন মিত্র বলেন , শিক্ষার্থীরা যে যে বিষয়ে দুর্বল সে সকল বিষয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইউএনও স্যার। পরীক্ষার নিতে একটু দেরি হয়েছে কারন প্রথমে ভুলে ই্ংরেজি ২য় পত্রের প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল । পরে প্রথমপত্র ছাপাতে ও দিতে দেরি হয়েছে। পরীক্ষা সুন্দরভাবে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারী কলেজের শিক্ষক জানান, পরীক্ষার জন্য কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। প্রশ্ন এলোমেলো দেয়া হয়েছে তার দায় কোন শিক্ষকের না। এর প্রধান সমন্বয়ক ইউএনও স্যার। জেলায় আর কোথাও এভাবে পরীক্ষা নেয় হচ্ছে না। ইউএনওর নির্দেশ না মানার কোন সুযোগ তো আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নেই। এছাড়া শুনেছি দায়িত্ব প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষককে বের করে দিয়েছেন ইউএনও স্যার। শিক্ষক হিসেবে এর চেয়ে অপমানের আর কি হতে পারে।
ডাসার ডিকে আইডিয়াল আতাহার আলী একাডেমি এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ বেগম বলেন, পরীক্ষা নিচ্ছি ইউএনও স্যারের নির্দেশে। মিটিং হয়েছিল প্রায় এক মাস আগে। তখন বলেছিলাম একজন অধ্যক্ষকে পরিক্ষা কমিটির প্রধান করতে কিন্তু কাউকে করা হয়নি। পরীক্ষা শুরু করতে দেরি হয়েছে ভুল প্রশ্ন দেয়ার কারনে। যে সময় পরীক্ষা শুরু হয়েছে তার থেকে ৩ ঘন্টা পর খাতা নিলেই হলো। এটা কোন সমস্যা না।
শশীকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যায়ের অধ্যক্ষ দূর্লভ আনন্দ বাড়ৈ বলেন , মিটিং এর সময় ইউএনও স্যারকে টেস্ট পরীক্ষার পরে মডেল টেস্ট নিতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। সে বললো কোন কথাই শুনবো না। পরে তার সিদ্ধান্ত মেনেই শিক্ষার্থীদের রুটিন দেয়া হয়েছে। ভুল প্রশ্ন পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে পড়ে। পরীক্ষা শুরুর ১২ ঘন্টা আগেই তো প্রশ্ন ও খাতা রেডি রাখার নিয়ম। সে নিয়ম মানলে এমন হতো না। এছাড়া তাকে নিয়ম অনুযায়ী টেস্ট পরীক্ষার পরে মডেল টেস্ট নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি সরকারী শেখ হাসিনা একাডেমী এন্ড উইমেন কলেজের অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা।
এ বিষয়ে ডাসার থানার নিবার্হী কর্মকতা সারমিন ইয়াছমিন এর কাছে জানতে তার কাযার্লয়ে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে যান ও সাংবাদিকরা ভিতরে যাওয়ায় তার সাথে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যকে গালিগালাজ করেন। কনফিডেনশিয়াল কাজে তিনি ব্যস্ত আছেন কথা বলার সুযোগ নেই তার। যখন ফ্রি হবেন তখন সুযোগ পেলে বক্তব্য দিবেন বলেও জানান তিনি।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মারুফুর রশীদ খান বলেন, বিষয়টি আপনার কাছে শুনলাম। পরীক্ষা নিয়ে কোন অভিযোগ পেলে বা উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র কোন গাফলতি থাকলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।