বার্তা ডেস্ক:
মাদারীপুরে সরকারী ভর্তুকির সার বেশি দামে বিক্রিসহ নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিলারদের কাছে সার ক্রয় করতে গেলে সারের মজুদ না থাকা, বরাদ্দ কম বলে কৃষকের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকায় সার বিক্রি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ সময় ডিলার পয়েন্ট খোলা থাকে না, ইউনিয়নে ডিলার পয়েন্ট নামে থাকলেও একই বাজারে কয়েকটি ইউনিয়নের ডিলার পয়েন্ট দেখানো হয়েছে। ডিলার পয়েন্ট দূরে হওয়ায় পরিবহন ব্যয় বেশি হয় ফলে কৃষকরা স্থানীয় বাজার থেকেই চড়া দামে সার ক্রয় করছে। অনেক ডিলার পয়েন্টের হদিস পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সরকারী ভর্তুকির টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার সূলভ মূল্যে বিক্রির কথা থাকলেও কৃষকের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সার। বস্তা প্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব ভর্তুকির সার। মাদারীপুর শহরের পুরানবাজার এলাকার ডিলার পয়েন্টেগুলোতে বস্তা প্রতি( ৫০ কেজি) ৭০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় সহ নানা ধরনের ব্যয়ের দোহাই দিয়ে বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে কৃষকদের কাছ থেকে। তবে টিএসপি সারের মজুদ না থাকায় তার দাম সহজে বলতে রাজি হয়নি বিক্রেতারা। সার না থাকার কারন হিসেবে ডিলাররা বরাদ্দ কম দেয়ার কথা জানান।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে জেলায় সেপ্টেম্বর মাসে টিএসপি ৯০ মে.টন,ডিএপি ১১২৩ মে.টন,এমওপি ১৭৩ মে.টন বরাদ্দ দেয়া হয়। অক্টোবর মাসে বরাদ্দ দেয়া হয় টিএসপি ১৯৮ মে.টন, ডিএপি ২৩৪০ মে.টন এবং এমওপি ৪৩০ মে.টন। নভেম্বও মাসে বরাদ্দ দেয়া হয় টিএসপি ৩৯০ মে.টন, ডিএপি ৩১৬০ মে.টন এবং এমওপি ৬৭০ মে.টন । ডিসেম্বর মাসে টিএসপি ৪০০ মে.টন, ডিএপি ২৪৬৩ মে.টন এবং এমওপি ৬৫৬ মে.টন। জেলার মোট ডিলার ৯৩ জন তালিকায় থাকলেও অনেক ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রের হদিস পাওয়া যায়নি।
চরমুগরিয়া এলাকায় ৩টি ইউনিয়নের ডিলারের ঠিকানা দেয়া থাকলেও স্বপ্না ট্রেডার্স ছাড়া আর কোন দোকানের হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া পেয়ারপুর ইউনিয়নের কুমারটেক পয়েন্টে কোন ডিলার নেই বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে চরমুগরিয়ার মিজান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান একজন পেট্রোল পাম্প ব্যবসায়ী ।তার বিক্রয় কেন্দ্রটি কোথায় স্থানান্তর করা হয়েছে তা জানেন না স্থানীয়রা।
মাদারীপুর শহরের পুরান বাজার এলাকার ডিলার আলমগীর হোসেন খান( মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ) মারা যাওয়ায় বাবুল চন্দ্র দাসকে দ্বিগুন বরাদ্দ দেয়া হলেও সেখানে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মস্তফাপুর বাজারে ২ টি বিক্রয় কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও একটি কেন্দ্রে (জগদিশ ট্রেডার্স) সার বিক্রি করতে দেখা যায়। সরকারী ভর্তুকির সার , টিএসপি, ডিএসপি ও এমওপি নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রেজিস্টারে কৃষকের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রাখার নিয়ম থাকলেও কোনো ডিলারই তা ঠিক মতো সংরক্ষন করেন না। ইউনিয়ন পর্যায়ে সার সরবরাহ করার জন্য সাব ডিলার ( লাইসেন্সধারী) থাকলেও তাদের সার দেয় না মূল ডিলাররা।
কালিকাপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল কালাম মোড়ল বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ডিলার কে জানি না। তবে শুনছি সে চরমুগরিয়া বসে বিক্রি করে। এখান থেকে সে দোকান ১৮ কি.মি দূরে। সার আনতে যে খরচ পড়বে তার চেয়ে আমাদের বাজার থেকে কিনেই জমিতে সার দিলেই কম দাম পড়বে। ইউনিয়নের মধ্যে হলে আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারতাম।
মস্তফাপুরের ডিলার পয়েন্টের সদানন্দের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের কাছে কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে সার নিতে কৃষকরা আসে। যে পরিমান বরাদ্দ আমরা পাই তাতে আমাদের হয় না। অনেক ডিলার পয়েন্টে লোকই যায় না। সব মিলিয়ে তেমন লাভ থাকে না আমাদের।
কুনিয়া ইউনিয়নের আপাশি গ্রামের কৃষক রাজ্জাক মিয়া জানান, আমাদের ইউনিয়নের ডিলার নাকি ত্রিভাগদী বাজারে আছে। একদিন গেলাম আশ পাশের লোকজন বললো মাঝে মাঝে দোকান খোলে আবার খোলে না। সরকার সুযোগ দিলেও আমাদের কোন কাজে আসে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাব ডিলার বলেন, একদিন বিএস অফিসার এসে একটা ব্যানার দিয়ে গেল কিন্তু সার দিল না। বেশিরভাগ ডিলাররা পয়েন্টে সার বিক্রি করে নাম মাত্র। বেশিরভাগ ব্লাকে বিক্রি করে দেয়। যে পরিমান বরাদ্দ সরকার দেয় তা সঠিকভাবে পেলে কৃষক উপকৃত হতো। তাই সরকারী তদারকী ভাল করা দরকার।
ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে সরাসরি সার দিয়ে দেই। মাঝে মাঝে চরমুগরিয়া, হাউসদী বাজারে ও মিঠাপুর বাজারে সার বিক্রি করি।
ডিলার বাবুল চন্দ্র দাস বলেন, আমার চাচাতো ভাই বরুন কুমার দাস( কেয়া এন্টারপ্রাইজ) করোনায় মারা গেছে। তার বরাদ্দটা আমি এনেছি। আমরা কোন খুচড়া সার বিক্রি করি না। আমরা সাব ডিলারদের দিয়ে দেই। বেশি দামে সার বিক্রি করি না। কিছু সার কম দামেও বিক্রি করতে হয়। এখন মৌসুম শেষ। ইরি মৌসুমে সারের চাহিদা বেশি থাকে।
মাদারীপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সার বেশি দামে বিক্রি করার কথা না। যাদের ডিলার পয়েন্ট নেই বা অন্য কোন অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: জাহিদ হাসান
ইমেইলঃ
মোবাইল: ০১৯২৭৩০৮৬২০
Copyright © 2025 মাদারীপুর বার্তা. All rights reserved.