রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরের বদরগজ্ঞে স্ত্রীকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে লাশ ডুমুর গাছে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগে স্বামী মমতাজ ওরফে সুলতানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহসপতিবার বিকেলে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২ এর বিচারক তারিক হোসেন এ রায় প্রদান করেছেন। রায় ঘোষনার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলো। তাকে কঠোর পুলিশী পাহারায় আদালতের হাজত খানায় নেয়া হয় সেখান থেকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার বিবরনে জানা গেছে, রংপুরের বদরগজ্ঞ উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে সুমাইয়া আখতার শারমিনের সাথে পাশ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার খাগড়াবন্দ মধ্যপাড়া গ্রামের ময়েজ উদ্দিনের ছেলে মমতাজ ওরফে সুলতানের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তারা দুজন বিয়ে করে এবং এক বছর সুমাইয়া তারে বাবার বাড়িতেই স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে। এরই মাঝে স্বামী মমতাজ ওরফে সুলতান পার্শ্ববর্তী গুচ্ছগ্রামের একটি মেয়ের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে । বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সুমাইয়ার সাথে তার স্বামী সুলতানের ঝগড়া হয়। ২০১৯ সালের ৪ জুন তারিখে স্বামী মমতাজ ওরফে সুলতান মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী সুমাইয়াকে ডেকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী কুতুবপুর বালুয়াপাড়া গ্রামের যমুনেশ্বরী নদীর তীরে নিয়ে গিয়ে সেখানে কোব্বাদ আলী এক ব্যাক্তির আখ ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে সুমাইয়াকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে তার লাশ সুমাইয়ার গলায় ওড়না পেচিয়ে একটি ডুমুর গাছে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায়। এলাকাবাসি ঘটনাটি নিহত সুমাইয়ার স্বজনদের খবর দিলে তারা ঘটনা স্থলে যায়। খবর পেয়ে বদরগজ্ঞ থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে নিহত সুমাইয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে বদরগজ্ঞ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হয় নিহত সুমাইয়ার স্বামী মমতাজ ওরফে সুলতান তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে গেছে। পরে পুলিশ ঘাতক স্বামী মমতাজ ওরফে সুলতানকে গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী সুমাইয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে সে আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। মামলায় তদন্ত শেষে পুলিশ আসামী মমতাজ ওরফে সুলতানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামী মমতাজ ওরফে সুলতানকে দোষি সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার রায় প্রদান করেন। সেই সাথে দশ হাজার টাকা জরিমানারও আদেশ দেন।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজিবিী অতিরিক্ত পিপি নয়নুর রহমান টফি এ্যাডভোকেট জানান, আমরা বাদী পক্ষে মামলাটি সন্দেহাতিত ভাবে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছি। এ রায়ে তারা সন্তোষি প্রকাশ করে দ্রæত রায় কার্যকর করার দাবি জানান। আসামী পক্ষের আইনজিবী আবুল হোসেন এ্যাডভোকেট জানান তার মক্কেল ন্যায্য বিচার পায়নি এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করবেন।