রাজনীতি বার্তা ডেস্ক:
দেশের গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দাবি উঠছে নতুন সম্মেলনের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী নতুন সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন। পরে করোনা পরিস্থিতি দেখে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে নতুন সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হবে।
ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, খুব তাড়াতাড়িই ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে এবং হওয়া উচিত। আমরা শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব। ওনার নির্দেশনা পেলেই আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্বে থাকা আরেক নেতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতীম কারও নেতৃত্বই অনির্দিষ্টকাল থাকবে না। তারপরও ছাত্রলীগে যেহেতু বয়সের বাধ্যবাধকতা আছে, তাই প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগে নিয়মিত সম্মেলন চান। তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার ভিত্তিতেই নতুন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখন সারাবিশ্বে আবারও মিক্রনের ভয়ে আক্রান্ত। এ ভয় একটু কমে এলে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সব কিছু পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে যেকোনো সময় সম্মেলনের জন্য নিজেরাও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও। আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, নতুন সম্মেলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকেন। সবসময় তিনি সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী যখনই বলবেন আমরা সংবাদ সম্মেলন করে সে তারিখ সবাইকে জানিয়ে দেব। নতুনদের হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত।
২০১৮ সালের ১১-১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন হয়। পরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর কয়েক দিন পর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি সংগঠনটির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। দুই বছর পর পর সম্মেলনের বিধান থাকলেও সম্মেলনের চার বছর হয়ে গেছে। বর্তমান কমিটিরও মেয়াদ শেষ। এর মধ্যে কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করছেন সংগঠনের অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ঢাবি বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছে চার বছর আগে। ছাত্রলীগ যেন স্থবির হয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল সম্মেলন হয়েছে ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর। এক বছর মেয়াদি কমিটি পাঁচ বছর পার করেছে। নতুন কমিটি হচ্ছে না। সম্মেলন ছাড়া প্রেস রিলিজ দিয়েই জেলা কমিটি করা হচ্ছে। অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ উঠছে। সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বাসায় বসেই তারা কমিটি করছেন। সময়ের দাবি, ছাত্রলীগের সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই সম্মেলন চায়। তাদের মেয়াদও শেষ।
ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি সোহান খান বলেন, গত বছর থেকেই আমরা সম্মেলন দাবি করে আসছি। বর্তমান কমিটি ভারপ্রাপ্ত ছিল চার মাস। তাদের ভারমুক্ত হওয়ার দুই বছর, আর সম্মেলনের চার বছর চলে গেছে। ছাত্রদের ভবিষ্যৎ, সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বিবেচনা করে অচিরেই সম্মেলন দেওয়া উচিত। সম্মেলনের কথা বললেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর কথা বলেন। সব কিছুর জন্য নেত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের গঠনতন্ত্র কেন? আমরা চাই সম্মেলনটা নিয়মের মধ্যে হোক।